পরিবেশের ‘রূপ’কার
রূপচর্চার পরিধি বেড়েছে। সৌন্দর্যবিধানের সঙ্গেই পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বও পালন করা হচ্ছে। রইল এই সাসটেনেবল বা অর্গানিক বিউটি-র গাইডলাইন
২০১৯ সালের ট্রেন্ড ছিল ‘ক্লিন বিউটি’। তারকারা নিজেদের ঝকঝকে লুকের ছবি পোস্ট করে জানাচ্ছিলেন, যে প্রডাক্টগুলি তাঁদের দাগছোপহীন নির্মল সৌন্দর্য উপহার দিয়েছে, সেগুলি নিজেরাও নির্মল। অর্থাৎ এই প্রসাধনীগুলি তৈরির সময় প্রকৃতি ও জীবজগতের ক্ষতি করা হয়নি। পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে এবং রাসায়নিক, টক্সিক উপকরণগুলি বাদ দিয়ে রূপচর্চার এই উপাদানগুলি তৈরি হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই, উষ্ণায়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য সংক্রান্ত বিপদ থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে এই ‘ক্লিন বিউটি’তে জোর দিচ্ছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
কোভিড-১৯ ঝাঁপিয়ে পড়ার পরে ‘ক্লিন বিউটি’র প্রয়োজন ও প্রচলন এক
ধাক্কায় অনেক বেড়ে গিয়েছে। করোনা মেকআপ ইন্ডাস্ট্রিকে কড়া চ্যালেঞ্জের
মুখে ফেলেছে। রূপবিশেষজ্ঞ ও বৈজ্ঞানিকরা মিলে এই সঙ্কটের একটি সমাধান বার
করেছেন। তাঁদের মতে, বিউটি ইন্ডাস্ট্রিকে প্রকৃতি রক্ষার ভারও নিতে হবে।
অপব্যয় কমাতে হবে। পৃথিবীর বুকে বর্জ্য জমা করলে চলবে না, সাজগোজের নামে
তার রত্নভাণ্ডারও শেষ করা যাবে না। পুরনো প্রডাক্টকেই রিসাইক্ল করে নতুন
প্রসাধনী তৈরি করতে হবে। সম্মিলিত ভাবে এরই নাম ‘সাসটেনেবল বিউটি’।
কী ভাবে সম্ভব বিউটির সাসটেনেবিলিটি
এই সাসটেনেবল বিউটি-র সার কথা, নিজের ও পৃথিবীর সৌন্দর্যের আয়ু বাড়াও। সাধারণত গ্রিন (প্রাকৃতিক ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য) কসমেটিকস দিয়ে সাসটেনেবল বিউটি ইন্ডাস্ট্রি তৈরি। এগুলিতে রাসায়নিক থাকে না। তাই চটজলদি কাজ না-ও হতে পারে। কিন্তু ধীরে ধীরে প্রভাব দেখা যায় এবং এই সৌন্দর্য বজায় থাকে দীর্ঘ দিন।
বেশ কয়েক ভাবে সাসটেনেবল বিউটি-র অভ্যেস গড়া যায়। এই বিষয়ে সালঁগুলি সচেতন কি না, লক্ষ রাখুন। প্রডাক্ট কেনার সময় লেবেলে ও প্যাকেজিংয়ে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করুন। রূপচর্চার উপাদান জোগাড় করুন ছাদের বাগান, রান্নাঘর থেকে। প্রডাক্টস ও কসমেটিকস রিসাইকলিং শিখে নিন।
ইকো-ফ্রেন্ডলি সালঁ
রূপবিশেষজ্ঞ প্রিসিলা কর্নার জানালেন, ‘‘আমার মা জুন টমকিন্স বরাবরই বিশ্বাস করেছেন যে, সাসটেনেবেল অপশনগুলিই এই ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ। বহু বছর ধরেই আমাদের সালঁ ইকো-ফ্রেন্ডলি। যন্ত্রগুলি সন্তর্পণে ব্যবহার করা হয়। সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু, অ্যামোনিয়া-ফ্রি হেয়ার কালার ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হয়। কেরাটিন ট্রিটমেন্টে ফর্মালডিহাইড ব্যবহার করা হয় না। ফাইল-ফ্রি নেলপলিশিংয়ে যন্ত্র বা রাসায়নিকের বদলে প্রাকৃতিক উপায়ে হাতে-নখে জেল্লা আনা হয়।’’
প্রিসিলার পরামর্শ, সতর্ক হলেই বিউটি স্টুডিয়োয় প্রচুর জল আর বিদ্যুৎ বাঁচানো যায়, এসি-র ব্যবহার কমানো যায়। অনেক পার্লারই স্কিন ও হেয়ার ট্রিটমেন্টে অ্যানিম্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (পিঁপড়ের ডিম, পশুর রোমকূপ থেকে নিষ্কাশিত ল্যানোলিন দেওয়া বাম প্রভৃতি) ব্যবহার বন্ধ করেছে। বদলে নানা ‘ভিগান অল্টারনেটিভ’ এনেছে।
কী দেখে চিনবেন
প্লাস্টিকের প্যাকেট আর নয়। ভরসা রাখুন পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাগজের প্যাকেজিংয়ে। কাচের বোতলে ভরা প্রসাধনী বা সুগন্ধি কেনা সবচেয়ে ভাল। অনেক সংস্থাই প্রডাক্ট শেষ হয়ে গেলে, তা ওই বোতলেই রিফিল করিয়ে দিচ্ছে। বা আপনি বোতলটি ধুয়ে অন্য কাজেও লাগাতে পারবেন।
বিধি মেনে সাসটেনেবল প্রডাক্ট তৈরি হলে, তার গায়ে ‘ক্রুয়েলটি ফ্রি’র ছাপ থাকা উচিত। প্রডাক্ট তৈরির কারখানায় জল খরচের পরিমাণ, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাসের নিঃসরণ কমানো হয়েছে এবং পশুপাখির নিপীড়ন করা হয়নি— এই কথাগুলি কি লেবেলে আছে?
বিভিন্ন দেশে সাসটেনেবিলিটি-র মাপকাঠিগুলি আলাদা। বিদেশে যতটা এই ধরনের নিরাপদ চিহ্ন সমেত প্রডাক্ট দেখতে পাওয়া যায়, এ দেশে হয়তো এখনই ততটা পাবেন না। সে ক্ষেত্রে কাচের বোতলে ভরা অর্গানিক প্রডাক্টে আস্থা রাখুন। অর্গানিক প্রডাক্টের বৈশিষ্ট্য হল, কোনও ভেষজ থেকে উপকরণ নিলে, সেখানে সাধারণত আর একটি গাছ লাগানো হয়। লেবেলের উপকরণের মধ্যে রাসায়নিক উপকরণ বা খনিজ তেল থাকলে, না কেনাই ভাল। অ্যামোনিয়া, প্যারাফিন, প্যারাবেন, পলিমার, সিলিকন, সালফেট ইত্যাদি পরিবেশ ও মানুষ উভয়ের পক্ষেই ক্ষতিকর।
0 মন্তব্যসমূহ