হযরত আবু বকর রাযি. এর জীবন পরিচয়-

হযরত আবু বকর (রাঃ) এর নাম আব্দুল্লাহ এবং উপনাম হল (আবু বকর)। তাঁর উপাধি হল সিদ্দিক ও আতিক। তাঁর পিতার নাম উসমান, উপমান হল আবু কুহাফা।  মাতার নাম সালমা। কুনিয়াত- উম্মুল খায়ের।

হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন কুরাইশ বংশের বনু তামিম শাখার অন্তর্ভুক্ত। ষষ্ঠ পুরুষ মুররা-এ গিয়ে তাঁর বংশ পরম্পরা রাসূল (সাঃ) এর সাথে মিশে যায়। রাসূল (সাঃ) এর শুভ জন্মের দু'বছর পর তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

ইসলাম গ্রহণের পুর্ব থেকেই তিনি সচ্চরিত্র, দায়িত্ববান, বিশ্বস্ততা এবং বংশীয় মর্যাদায় ভূষিত ছিলেন। তিনি একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। দরিদ্র এবং অভাবীদের তিনি নিজ সম্পদ থেকে সাহায্য করতেন। জাহিলিয়াতের যুগে রক্তপনের মাল তাঁরই নিকট জমা রাখা হত। আর তিনি বংশগতি বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন।

রাসূল (সাঃ) এর সাথে তাঁর শৈশব থেকেই বন্ধুত্ত ছিলো। মহানবী (সাঃ) এর বুক নবুয়াতের আলোকে আলোকিত হলে,  তিনিই প্রথম এ আলো গ্রহণ করেন। স্বয়ং রাসূল (সাঃ) তিনি নিজেই বলেন, আমি যারই নিকট ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি তার নিকট থেকে কিছু না কিছু সংকোচবোধ অনুভব করেছি। কিন্তু আবু বকর (রাঃ) কোনো সংকোচ অনুভব করেনি।

তিনি ঈমান আনার পর তাঁর ঈমানী শক্তি এই ছিলো যে, কোনো অবস্তাতেই তাতে দুর্বলতা প্রকাশ সৃষ্টি হওয়া সম্ভব ছিলো না। মেরাজের সকালে যখন রাসূল (সাঃ) আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়ার ঘটনা ব্যাখা করলেন, তখন কাফেররা হাসি তামাশা করলো। তারপর একদিন আবু বকর (রাঃ)  কে রাস্তায় পাওয়া গেলো। তাকে দেখে কাফেররা বলতে লাগলো,  তোমাদের যে বন্ধু আল্লাহর পক্ষ থেকে অহি অবিতীর্ণ হওয়া দাবী করত, এখন সে নাকি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতও করে এসেছে! আবু বকর, তুমি কি তাঁর এ অদ্ভুত দাবিও মেনে নিবে...? তখন আবু বকর (রাঃ) জবাব দিলেন - কেনো নয়..? আমিতো এর চেয়ে আশ্চর্যজনক কথা মেনে থাকি। তাঁর এরুপ ঈমানের কারণে নবুওয়াত দরবার থেকে তাকে সিদ্দিক উপাধি দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁর নাম হলো হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)।

হযরত আবু বকর (রাঃ)- এর ইসলাম প্রচারঃ-

হযরত আবু বকর (রাঃ) ইসলাম প্রচারে তিনি পয়গম্বরের বন্ধুত্তের হক পুরোপুরি আদায় করেছেন। রাসূল (সাঃ) তিনি প্রতিদিন সকাল-বিকাল তাঁর বাড়িতে যেতেন। দু'জনে ইসলাম প্রচারের বিষয় নিয়ে একান্তভাবে আলোচনা করতেন। তারপর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) যেসব গৌত্রে বা এলাকায় আল্লাহর পয়গাম শোনাতে যেতেন, তখন আবু বকর (রাঃ) সর্বদায় তাঁর সাথে থাকতেন। তাছাড়া তিনি নিজেও এই দায়িত্ব পালন করতেন। অনেক প্রখ্যাত সাহাবী যেমন- হযরত উসমান ইবনে আফফান, হযরত যুবায়ের ইবনে আওয়াম, হযরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ, হযরত স'আদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) প্রমূখ তাঁরই হাতে মুসলমান হয়েছেন।

এছাড়া মক্কার কাফেরদের ত্রিতদাসগুলো যখন মুসলমান হওয়া শুরু করলো এবং কাফেররা এ অপরাধে তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিতে লাগলো, তখন আবু বকর (রাঃ) তাঁর নিজের টাকায় তাদের খরিদ করে মুক্ত করে দেন। এতে ক্রিতদাসরা সেই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রেহায় পায়। এই ভাবে নানাপ্রকারে তিনি ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

তিনি ছিলেন একজন দৃঢ় ঈমানের অধিকারী ব্যক্তি। তিনি তার সম্পদ থেকে যেমনভাবে মানুষদের সাহায্য করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে তাঁর স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে মানুষদেরকে ইসলামের পথে দাওয়াত দিয়েছেন। তিনি সবসময় মুহাম্মদ (সাঃ) এর পাশে থেকেও ইসলাম প্রচার করেছেন।

সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, ইসলামের প্রতি হযরত আবু বকর (রাঃ) এর দয়া, মহব্বত ও ভালোবাসা যথেষ্ট পরিমাণে ছিলো। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে থেকে তিনি ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আর তাঁর এই অবদান ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য।


তাই অতি সম্মানের সহিত আমরা তাকে স্মরন করবো ও   ইসলাম ইতিহাসের পাতায় কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অবদান স্বর্নাক্ষরে রচিত থাকবে।   [ইন,শা আল্লাহ]