Advertisement

আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড লেনদেনে খরচের খাত নির্দিষ্ট করল বাংলাদেশ ব্যাংক

 


আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডধারীরা বিদেশি উৎস থেকে অনলাইনে পণ্য ও সেবা কেনায় একবারে ৩০০ ডলারের লেনদেন করার সুযোগ পান। কিন্তু অনলাইনে পণ্য কেনাকাটার নামে এই সুযোগের অপব্যবহার করছে অনেকেই। নির্দিষ্ট পণ্য ও সেবা ক্রয়ে এই ডলার ব্যবহার না করে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের ক্ষেত্রেও এই ডলার খরচের অভিযোগ উঠেছে এবং এর মাধ্যমে দেশের ডলার বিদেশে পাচার হচ্ছে। বিশেষভাবে অনলাইনে জুয়া খেলা, বৈদেশিক লেনদেন, বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনাবেচা, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও লটারির টিকিট কেনার কাজে এই ডলার ব্যবহার করা হয় বলেও প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সতর্ক করার পরও তা বন্ধ হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড লেনদেনে অপব্যবহার রোধে একবারে এই ৩০০ ডলার খরচের খাতগুলো নির্দিষ্ট করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এসংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদেশি উৎস থেকে অনলাইনে পণ্য ও সেবা কেনায় প্রতিবার ৩০০ ডলার খরচের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু কী পণ্য ও সেবা ক্রয়ে এটা খরচ করা যাবে সেটি নিয়ে অস্পষ্টতা থাকায় কার্ডধারীরা অপব্যবহারের সুযোগ নেন। এ কারণে এবার এই ডলার খরচের খাতগুলো নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এতে অপব্যবহার অনেকটাই রোধ করা সম্ভব হবে।’

সার্কুলারে বলা হয়, গাইডলাইনস ফর ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশন্স-২০১৮, খণ্ড-১, অধ্যায়-১৯, অনুচ্ছেদ-১৭ অনুযায়ী অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের কার্ডধারীরা বিদেশি স্বনামধন্য ও নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে পণ্য ও সেবা ক্রয় যেমন ডাউনলোডযোগ্য অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার, ই-বুক এবং ম্যাগাজিন ও নিউজপেপার সাবস্ক্রিপশন ফি পরিশোধে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের জন্য প্রাধিকারপ্রাপ্ত। এসব পণ্য ও সেবা ছাড়াও বেসিসের সদস্যভুক্ত তথ্য ও প্রযুক্তি বা ফার্মের অনুমোদনযোগ্য পেমেন্ট, মেম্বারশিপ ফি, তথ্য ও প্রযুক্তি খরচ, ভিসা প্রক্রিয়া ফি, হোটেল বুকিং ও মোবাইল ফোনের রোমিং বিল পরিশোধ করা যাবে। আর এসব পণ্য ও সেবার সবই ওই ৩০০ ডলারের মধ্যেই হতে হবে।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে পণ্য ও সেবামূল্য পরিশোধে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সার্কুলারে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য ও সেবা ব্যতীত বৈধ যেকোনো পণ্য ও সেবা ক্রয় (অনলাইনে ডিজিটাল মার্কেটিং/বিজ্ঞাপন ব্যয়সহ) অনুমোদিত লেনদেন হিসেবে বিবেচিত হবে। অনলাইন ব্যবস্থায় মূল্য পরিশোধের বিপরীতে কার্ডহোল্ডার কর্তৃক প্রযোজ্য কর পরিশোধ এবং পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তির বিষয়টি অনুমোদিত ডিলার ব্যাংককে নিশ্চিত হতে হবে। এ ছাড়া অপ্রত্যাশিত ঝুঁকি এড়াতে কার্ডহোল্ডারদের অনির্ভরযোগ্য ও অসাধু বিক্রেতার থেকে ক্রয় না করা থেকে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তার আগে ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর অপব্যবহার রোধে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডে পণ্য ও সেবা ক্রয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে সার্কুলার জারি করা হয়। ওই সার্কুলারে বলা হয়, বিদেশ থেকে পণ্য ও সেবার বৈধ কেনাকাটার বিপরীতে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডে ইস্যুকৃত এই ডলার ব্যবহার করা যাবে। বাংলাদেশে উৎপাদিত কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয়ে এই ডলার ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষভাবে অবৈধ বিভিন্ন পেমেন্ট যেমন অনলাইনে জুয়া খেলা, বৈদেশিক লেনদেন, বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনাবেচা, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও লটারির টিকিট কেনার কাজে এই কার্ড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এই বিষয়টি কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংকগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহকদের অনলাইন ট্রানজেকশন অথরাইজেশন ফরম বা ওটিএএফ পূরণ করে ব্যাংকগুলোতে জমা দিতে হবে। এরপর ব্যাংক সেটি যাচাই-বাছাই করে কোনো অসংগতি না পেলে গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ডের ওই ডলার ব্যবহারের অনুমতি পাবে। ক্রয়কালীন লেনদেনের ক্ষেত্রে যদি কর বা শুল্ক প্রযোজ্য হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডধারী ব্যক্তিকে তা পরিশোধ করতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ